টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে পানি বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার(২০ জুন) পুংলী নদীর পানি বেড়ে স্থানীয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে।পাউবো সূত্রে জানাগেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে যমুনা সহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
২৪ ঘণ্টায় যমুনার জোকারচর(ঝিনাই/নিউ ধলেশ্বরী) পয়েণ্টে ৭৪ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পোড়াবাড়ি পয়েণ্টে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৩৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েণ্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বংশাই নদীর মির্জাপুর পয়েণ্টেগত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৬ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি প্রতিদিন ২৭ থেকে ৭৪ সেণ্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুংলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রকল্পের ৪২টি ঘরের মধ্যে ৩৪টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৮টির কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে পাশের নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন শুরু হলে এলাকাবাসী বাঁশ দিয়ে ঘের করে গাছের ডাল-পালা ফেলে। মঙ্গলবার সকালে পাউবো’র লোকজন ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলছে। জিওব্যাগের ভেতর বালু ভরতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাইরের সুরক্ষা দেয়াল ভেঙে সেখানকার বালুই ভরাট করছে।
স্থানীয়রা জানায়, যমুনার শাখা নিউ ধলেশ্বরীর পুংলী অংশে শুকনো মৌসুমে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুংলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৩দিন আগে নদীতে ভাঙন দেখা দিলেও সোমবার(১৯ জুন) সকাল থেকে ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৪টি ঘরে বসবাসকারী পরিবারগুলো আতঙ্কে রয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রকল্পের ২০০ মিটার এলাকায় প্রায় ৮ হাজার জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু করা হয়েছে।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া মজনু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার, রেজাউল করিমের স্ত্রী জাহানারা বেগম, আবু তাহেরের স্ত্রী রুনা লায়লা, মো. স্বপন মিয়ার স্ত্রী সোনিয়া বেগম, মৃত তোতা মিয়ার স্ত্রী লালভানু বেওয়া, মুনছের আলীর স্ত্রী হামেদা বেগম জানান, গত ৩ দিন ধরে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে জানালেও কেউ দেখতে আসেনি। গত সোমবার সকাল থেকে ভাঙনের তীব্রতা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এসে পরিদর্শন করে গেছে। পুংলী গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান, নাছির উদ্দিন, আব্দুস সামাদ সহ অনেকেই জানান, অপরিকল্পিতভাবে স্থান নির্বাচন ও নদীর তীরে এক কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪২টি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নদী থেকে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সরকারের লোকজন শুকনো মৌসুমে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করেছে ফলে সরকারি ঘরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবার সরকারি টাকায়ই জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তারা আরও জানান, পুংলী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে পুংলী সেতু ও রেলসেতুও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। সেতু দুটির উজান এবং ভাটিতে প্রশাসনের মদদে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সুবিধাবাদী নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করে গভীর করে ফেলেছে।
কালিহাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেহাব উদ্দিন জানান, সোমবার দুপুরে খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান নির্বাচন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পুংলী নদীর দক্ষিণ তীরে বাঁধ নির্মাণ করবে- এমনটা জেনে তারা এলেঙ্গা পৌরসভায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই স্থান নির্বাচন করেছেন। বর্ষায় নদীতে পানি বাড়ছে এজন্য ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে প্রকল্পের ২০০ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শুষ্ক মৌসুমে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
টাঙ্গাইল পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে পুংলী সেতু বা রেলসেতুর ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই। তবে নদী ভাঙন দেখা দেওয়ায় জরুরি সেবার অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০ মিটারের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছে নদী ভাঙনের খবর পেয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পাউবো’র মাধ্যমে ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন রোধে জরুরি সেবার বাইরেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।